
ওশান নিউজ প্রতিবেদক : প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্ণ করল দেশের দ্বিতীয়
সমুদ্রবন্দর মোংলা। এ উপলক্ষ্যে প্লাটিনাম জয়ন্তী উদযাপন করছেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
আজ ১ ডিসেম্বর সোমবার দুপুর ১২টায় বন্দরের প্রধান ফটকের সামনে বেলুন উড়িয়ে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান।
এর আগে বন্দর ভবনের সামনে থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়। পরে বন্দরের জেটির অভ্যন্তরে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অবদান ও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বন্দর ব্যবহারকারী ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেওয়া হয়। বন্দরের কৃতিত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বন্দরে ১৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এবং ঝুঁকিপূর্ণ কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সম্মাননা দেওয়া হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আবদানের জন্যও আমদানি -রফতানিকারক, বন্দর ব্যবহারকারীদের বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়। প্লাটিনাম জয়ন্তী দিবসে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির নির্বাহী কমিটির গবেষণা বিষয় সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, জামায়াতে ইসলামী কেন্দ্রীয় নেতা শেখ আব্দুল ওয়াদুদ, আন্তর্জাতিক অপরাধের দূষণ অ্যাডভোকেট গাজী এইচ এম তামিম, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান, বন্দরের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর মো. শফিকুল ইসলাম সরকার, সদস্য (অর্থ) ও পরিচালক (প্রশাসন) কাজী আবেদ হোসেন (যুগ্মসচিব), সদস্য (প্রকৌশল ও উন্নয়ন) ড. এ. কে. এম. আনিসুর রহমান (যুগ্মসচিব), পরিচালক (বোর্ড) কালাচাঁদ সিংহ (যুগ্মসচিব)সহ বিভিন্ন স্তরের বন্দর ব্যবহারকারীরা।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান বলেন, এই বান্দরের কারণে প্রায় লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্কার সৃষ্টি হয়েছে। মোংলা বন্দর সক্ষমতা অর্জন করেছে এবং মোংলা বন্দরকে আরও আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু প্রকল্প চলামান রয়েছে ও কিছু প্রকল্প ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য হাতে নেওয়া হয়েছে।
বিগত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কার্গো হ্যান্ডলিং এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮৮ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন, অর্থবছর শেষে বন্দরে ১ কোটি ৪ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন কার্গো হ্যান্ডলিং এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন এবং ১৭.২৫% (শতাংশ) বেশি কার্গো হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ হাজার টিইইউজ, অর্থবছর শেষে বন্দরে ২১,৪৫৬ (একুশ হাজার চারশত ছাপ্পান্ন) টিইইউজ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১,৪৫৬ (এক হাজার চারশত ছাপান্ন) টিইইউজ এবং ৭.২৮% (শতাংশ) বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা হয়।
২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৩৩ কোটি ৮৭ লাখ টাকা, অর্থবছর শেষে বন্দরে ৩৪৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা রাজস্ব আয়ের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ কোটি ৪৬ লক্ষ টাকা এবং ২.৮৩% (শতাংশ) বেশি রাজস্ব আয় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া বন্দরের নীট মুনাফার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২০ কোটি ৪৬ লক্ষ ২০ হাজার টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বন্দরে ৬২ কোটি ১০ লাখ টাকা নীট মুনাফা অর্জনের মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা ২০৩.৪৯% বেশি।
আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রতি ঘন্টায় ২৪টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে এবং জেটির সম্মুখে নিয়মিত ড্রেজিং এর ফলে নাব্যতা বিরাজমান থাকার কারণে ০৫টি জোটতে একইসঙ্গে ৫ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে।
বর্তমান অর্থ বছরের প্রথম ০৫ (পাঁচ) মাসে জাহাজ এসেছে ৩৫৬ টি, কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৩,৮৫৪ টিইউজ, গাড়ি আমদানি ৪,১৩৯ টি, পন্য আমদানি-রপ্তানি ৪৪ লক্ষ টন। এছাড়া আধুনিক যন্ত্রপাতি সংগ্রহের ফলে প্রথমবারের মতো প্রতি ঘন্টায় ২৪ টিরও বেশি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে এবং জেটির সম্মুখে নিয়মিত ড্রেজিং এর ফলে নাব্যতা বিরাজমান থাকার কারণে ০৫ টি জেটিতে একই সাথে ০৫ টি জাহাজ হ্যান্ডলিং করা সম্ভব হচ্ছে।
বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশে ট্রানজিট পণ্য মোংলা বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির সুদূরপ্রসারী সুসম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। মোংলা বন্দর ব্যবহার করে স্থল, নৌ এবং রেলপথের মাধ্যমে রাজশাহী, রংপুর ও বরিশাল বিভাগের পণ্য পরিবহনকে সহজতর এবং দ্রুত করবে।
মোংলা বন্দরে ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে পোর্ট রিসিপশন ফ্যাসিলিটি (পিআরএফ) প্রকল্প সম্পন্ন হয়েছে যা উদ্বোধনের জন্য অপেক্ষমান রয়েছে। এর ফলে এ অঞ্চলে তেলবাহী কোনো জাহাজ বা ট্যাংকার হতে দুর্ঘটনা বশতঃ পানিতে তেল নিঃসরণ হলে তেল অপসারণকারী ভেসেলের মাধ্যমে তা সংগ্রহ করে নদী ও সামুদ্রিক পরিবেশকে দূষণ থেকে রক্ষা করার সক্ষমতা অর্জন করবে মোংলা বন্দর।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রাণপ্রবাহ এ বন্দরটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি বর্তমানে খাদ্যশস্য, সিমেন্ট ক্লিংকার, সার, মোটর গাড়ী, মেশিনারিজ, চাল, গম, কয়লা, তেল, পাথর, ভুট্টা, তেলবীজ, এলপিজি গ্যাস আমদানি এবং সাদামাছ, চিংড়ি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কাকড়া, ক্লে, টাইলস, রেশমী কাপড় ও জেনারেল কার্গো রপ্তানির মাধ্যমে দেশের চলমান অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রেখে আসছে।
মোংলা বন্দরকে আধুনিক ও বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু
প্রকল্প চলমান রয়েছে ও কিছু প্রকল্প ভবিষ্যৎ উন্নয়নের জন্য হাতে নেয়া হয়েছে।