
ওশান নিউজ প্রতিবেদক : রাজধানীর পল্টনে ইনকিলাব মঞ্চের সংগঠক ও জুলাই যোদ্ধা শরীফ উসমান হাদির ওপর গুলির ঘটনায় সারাদেশে জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ইস্যু নতুন করে সামনে এসেছে। চাঞ্চল্যকর এই হত্যাচেষ্টার ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজন সন্দেহভাজনকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
এছাড়া ঢাকাসহ সারাদেশের জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা সাজাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আজ ১৪ ডিসেম্বর রোববার বিকেলে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, রাজধানীর পল্টনের বিজয় নগর এলাকায় হেলমেট পরিহিত অবস্থায় সন্দেহভাজনরা খুব কাছ থেকে উসমান হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। ঘটনার প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং অভিযুক্তদের গ্রেফতারে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে একযোগে অভিযান চলছে।
অভিযুক্তরা যাতে সীমান্ত অতিক্রম করতে না পারে, সে জন্য তাদের পাসপোর্ট ব্লক করা হয়েছে। সীমান্ত এলাকাগুলোতে অতিরিক্ত সতর্কতা জারি করা হয়েছে। অতিরিক্ত কমিশনার আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের ধরতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ৫০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
এরই মধ্যে শেরপুরের নালিতাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে লোক পারাপারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ঘটনার সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে এবং মোটরসাইকেলের মালিককে র্যাব আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে।
ডিএমপির এ উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্তদের কেউ বিদেশে পালিয়ে গেছে কি না এমন কোনো তথ্য এখনো ইমিগ্রেশন ডাটাবেজে পাওয়া যায়নি। ফয়সাল করিম মাসুদের সর্বশেষ বিদেশ যাত্রার তথ্য অনুযায়ী, তিনি জুলাই মাসে থাইল্যান্ড থেকে দেশে প্রবেশ করেন।
এরপর তার দেশত্যাগের কোনো রেকর্ড নেই। হাদির ওপর হামলার পেছনের কারণ সম্পর্কে এ কর্মকর্তারা বলেন, ইনকিলাব মঞ্চের একজন শীর্ষ সংগঠক হিসেবে হাদি ছিলেন একটি পক্ষের প্রতিপক্ষ। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের পক্ষ থেকেই তাকে টার্গেট করে পরিকল্পিত হত্যাচেষ্টা চালানো হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।
ঘটনার তিন দিনেও মামলা না হওয়ার বিষয় জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম বলেন, এ ঘটনায় এখনো মামলা না হলেও আমরা জিডি করেছি। এখন বাদীপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি৷ যদিও তারা রোগী নিয়ে ব্যস্ত, আমচা চেষ্টা করছি মামলার ড্রাফট নিয়ে বাদীর স্বাক্ষর আনার।
এটা সম্ভব না হলে প্রয়োজনে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করবে। নির্বাচন সামনে রেখে অপারেশন ডেভিল হান্ট–টু: নির্বাচনকালীন সময়ে সহিংসতা ও নাশকতা ঠেকাতে ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট–টু’ শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নজরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, এই অভিযান শুধু ঢাকায় নয়, সারাদেশে জোরদার করা হচ্ছে। যারা দুষ্কৃতিকারী, অস্ত্রধারী কিংবা নির্বাচনকে ঘিরে সহিংসতা সৃষ্টির চেষ্টা করতে পারে তাদের আইনের আওতায় আনাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।
হাদির ঘটনায় জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা: জুলাই যোদ্ধাদের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে অতিরিক্ত কমিশনার নজরুল বলেন, হাদি একজন নন দেশে হাজারো, লাখো জুলাই যোদ্ধা রয়েছেন।
প্রত্যেকের জন্য আলাদা ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তবে রাষ্ট্র ও রাজধানীর সার্বিক নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি যেসব সম্মুখসারির জুলাই যোদ্ধা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের বিষয়ে আলাদা করে থ্রেট অ্যানালাইসিস করা হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী হাই-প্রোফাইল ও ঝুঁকিপূর্ণ জুলাই যোদ্ধার জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে পুলিশ জানায়, কোনো এলাকায় সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী বা অপরাধীর তথ্য পেলে তা দ্রুত পুলিশ বা ৯৯৯-এ জানানোর জন্য। তথ্যদাতার পরিচয় সম্পূর্ণ গোপন রাখা হবে।
চাঞ্চল্যকর এই হামলার ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও জুলাই
যোদ্ধাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে
বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।