ওশান নিউজ প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য জাতীয় পত্রিকায়
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন। টিএফআই-জেআইসি সেলে গুম-খুন এবং জুলাই-আগস্টে
সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক মামলাগুলোর পরিপ্রেক্ষিতে এই আদেশ দেওয়া হয়েছে।
একইসঙ্গে গুমের দুই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ২০
নভেম্বর ধার্য করা হয়েছে।
আজ বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর
চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক
প্যানেল এ আদেশ দেন। প্যানেলের অন্য সদস্যরা হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ
এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
সকালে তিনটি মামলার আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রসিকিউশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল
ইসলাম।
পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে তাজুল ইসলাম জানান, তিন মামলার মোট ১৫
আসামিকে গ্রেপ্তারের পর ট্রাইব্যুনালে হাজির করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর
মধ্যে র্যাবের টিএফআই সেলে গুম ও নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায়
১৭ আসামির মধ্যে ১০ জনকে আদালতে আনা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে
কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ ছাড়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের
হাজিরের জন্য দুটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিটি আগামী ২৯ অক্টোবরের মধ্যে প্রকাশ করতে হবে। একইসঙ্গে পরবর্তী শুনানির
তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ নভেম্বর।
অন্যদিকে,
জেআইসি (জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল)-এ গুমের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ১৩ আসামির
মধ্যে তিনজনকে আদালতে হাজির করা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাদের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেন
এবং পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ মামলার পরবর্তী
শুনানিও নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ নভেম্বর।
এ ছাড়া জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরায় ২৮
জনকে হত্যার অভিযোগে দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাজির হওয়া দুই
আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। তবে পলাতক দুই আসামি হাজির না
হওয়ায় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। এ মামলার পরবর্তী শুনানির
দিন ঠিক করা হয়েছে ৫ নভেম্বর।
এর আগে ৮ অক্টোবর পৃথক তিন মামলায় মোট ৩৪ আসামির বিরুদ্ধে
আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের
বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং আজকের দিনটি শুনানির জন্য নির্ধারণ করে।
তিন মামলার মধ্যে একটিতে ১৭ জন,
আরেকটিতে ১৩ জন এবং তৃতীয়টিতে ৪ জন আসামি রয়েছেন। এর দুটিতেই শেখ হাসিনার নাম
রয়েছে।
অভিযুক্তদের মধ্যে ২৫ জন সেনা কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে ১৫
জনকে সেনাসদর ১১ অক্টোবর হেফাজতে নেয়।
তারা হলেন, র্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর মো. রাফাত বিন আলম, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
এদিকে সেনা কর্মকর্তাদের আদালতে হাজির ঘিরে রাজধানীর
কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ বিভিন্ন
এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল থেকেই পুলিশ, র্যাব,
বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা মোতায়েন ছিলেন।
মন্তব্য করুন