ওশান নিউজ ডেস্ক : এশিয়ায় শান্তি
প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টায় আরেকটি বড় সাফল্য যোগ হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্পের হাতে। তাঁর উপস্থিতিতে কুয়ালালামপুরে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া স্বাক্ষর করেছে
বহুল প্রত্যাশিত বর্ধিত শান্তি চুক্তি যা দুই দেশের দীর্ঘদিনের
সীমান্ত সংঘাতের অবসানের দিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আজ রোববার (২৬ অক্টোবর) মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডের অনুতিন চার্নভিরাকুল এবং কম্বোডিয়ার হুন মানেত “Delivering Peace” লেখা ব্যানারের সামনে এই শান্তি চুক্তিতে সই করেন।
চুক্তিটি তিন মাস আগে সম্পন্ন হওয়া যুদ্ধবিরতির
ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা এখন
স্থায়ী শান্তির ভিত্তি গড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো
সীমান্ত অঞ্চলে চলমান সহিংসতা থামিয়ে দুই দেশের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক
পুনঃস্থাপন করা।
কম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেত বলেন, এই চুক্তি পূর্ণভাবে বাস্তবায়িত হলে এটি স্থায়ী শান্তির ভিত্তি গড়বে এবং দুই দেশের সম্পর্ক মেরামতের পথ খুলে দেবে।
সীমান্তের নিরীহ মানুষ বছরের পর বছর সংঘাতে ভুগছে, এখন সময় এসেছে শান্তি ফেরানোর। তাঁর বক্তব্যে যুদ্ধবিধ্বস্ত সীমান্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষের প্রতি সহানুভূতির সুর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রসঙ্গত, গত জুলাইয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে ফোনে দুই দেশের নেতাদের যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান এবং সতর্ক করে বলেন, সংঘাত অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য আলোচনা স্থগিত করবে। তিনি জানান, “আমরা উভয় দেশের সঙ্গেই বাণিজ্য ও সহযোগিতা চালিয়ে যাব, যতক্ষণ তারা শান্তিতে থাকে।
তাঁর সেই মধ্যস্থতার ফলেই আজকের এই চুক্তি সম্ভব
হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
দীর্ঘদিন ধরেই সীমান্তে রকেট হামলা ও
ভারী গোলাবর্ষণ নিয়ে উত্তপ্ত ছিল থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। বিগত সংঘাতে অন্তত ৪৮ জন
নিহত ও প্রায় তিন লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছিলেন যা সাম্প্রতিক
ইতিহাসে দুই দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ সংঘাত হিসেবে বিবেচিত।
চুক্তি অনুযায়ী, সীমান্ত এলাকায় স্থাপিত ভারী অস্ত্র সরিয়ে নেওয়া হবে এবং আটক থাকা ১৮ জন কম্বোডিয়ান সেনাকে মুক্তি দেওয়া হবে।
থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুতিন বলেন, এটি সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রথম পদক্ষেপ।
আমরা চাই, সীমান্তের
মানুষ আর কখনও গুলির শব্দ না শুনুক।
কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ট্রাম্পকে স্বাগত জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। ঐতিহ্যবাহী নৃত্যের মাধ্যমে তাঁকে স্বাগত জানানো হয়।
ট্রাম্প নিজে লালগালিচায় দাঁড়িয়ে এক হাতে
যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা, অন্য হাতে
মালয়েশিয়ার পতাকা নাড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এদিকে, আসিয়ান সম্মেলনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের মধ্যে একটি সমান্তরাল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
মার্কিন বাণিজ্য আলোচক
জেমিসন গ্রিয়ার জানান, আলোচনায়
শুল্কবিরতি ও দুর্লভ খনিজ (‘রেয়ার আর্থ’) রপ্তানি নিয়েও আলোচনা হয়েছে, যা ছিল অত্যন্ত
ফলপ্রসূ। ট্রাম্প বৈঠকে বলেন,
যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ খনিজসম্পদ
নিয়ে নতুন চুক্তি করবে এবং কম্বোডিয়ার সঙ্গেও বৃহৎ বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের
প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রোববার ট্রাম্পের ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। লুলা আশা প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই ব্রাজিলের পণ্যের ওপর আরোপিত ৫০ শতাংশ শুল্ক কমাবে। তবে কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নির সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিল হয়েছে।
বরং ট্রাম্প ঘোষণা
দিয়েছেন, কানাডার
পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স
মন্তব্য করুন